Skip to content

আকাশ ভাবনার সাত-সতেরো!

আকাশ দেখছি। রাতের আকাশ আমাকে বরাবরের মতো টানে। জানালায় পাশে দমকা বাতাস বইছে । এখন ভরা পূর্ণিমা না হলেও তারাগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে যে যার মতো আলো ছড়াচ্ছে। ভাবি, সব গুলো একসাথে হয়ে গেলেই বেশ হিজিবিজি হয়ে যেতো। এতো আকর্ষণ বোধকরি আকাশ প্রেমীদের জন্য তৈরী করতে পারতো না। অনেকে বলেন, আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে নাকি মন ভালো হয়। আচ্ছা, যাদের মন এমনিতেই ভালো, তাদের কি আরো বেশি ভালো হয়ে যায়? জানা নেই। তবে আকাশ দেখলে আকাশের বিশালতা বুদ্ধিমান মানুষেরা উপলব্ধি করতে পারেন। কি বিশাল আকাশ!  যেদিকেই তাকাই, যেন শেষের কোনো চিহ্ন নেই। আকাশ নিয়ে কি সাহিত্যও কম হয়েছে? কত কবি, সাহিত্যিক আকাশ নিয়ে লিখে গিয়েছেন কত কিছু।

“আকাশ আমায় শিক্ষা দিল উদার হতে ভাই রে” 

হ্যা। একমাত্র বিশাল হৃদয়ের অধিকারীরাই উদারতার মহান গুণ অর্জন করে থাকে। সংকীর্ণ হৃদয়ে উদারতার জায়গা হয় না, হবেই বা কি করে! উদার হওয়া, মানুষের চাওয়া পাওয়াকে সম্মান করা, কারো প্রতি কিছু চাপিয়ে না দেওয়া, সব কিছুই তো একই সূত্রে বাধা। আমাদের চারিপাশের পৃথিবীটাকে একটু বাসযোগ্য করতে অনেক বেশি উদার মনে মানুষের দরকার। আমাদের আহাজারি, সংঘাত, হানাহানি অনেকটা কমে যেত বৈকি। 

যাজ্ঞে। আবার আকাশে ফিরে আসি। বুদ্ধিমান মানুষেরা শুধু আকাশ থেকে বিশালতাই উপলব্ধি করে না। অনেকে সৃষ্টিকর্তাকেও তো খুঁজে ফিরে এই বিশাল আকাশে। বিশেষ করে মুসলমানেরা। তাদের মতে আল্লাহ আছেন সাত আসমানের উপরে। সেখান থেকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করে চলছে এ দো-জাহানের সব কিছু। রহমতের ধারা বয়ে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই তো, ঘোর বিপদে কিংবা তীব্র কৃতজ্ঞতাঘণ মূহুর্তে বান্দা হাত তুলে তাকিয়ে থাকে আকাশ পাণে। আহা! সৃষ্টি ও স্রষ্টার কি মধুর সম্পর্ক।

রাতের আকাশে পাখিদের আনাগোনা কম। তবে আছে। ডানা মেলে তারা উড়ে যায় আবছা আলো কে সঙ্গি করে। ডানা ঝাপটানো তাদের নিয়ে যায় গন্তব্যের আরো কাছে। মানুষেও পাখিদের মতো আকাশে উড়ে চড়ার অভিপ্রায় হলো। আবিষ্কার হলো উড়োজাহাজ। ভাবা যায়! মানুষ আকাশপথে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে ফেলছে অনায়াসে। রোম থেকে পারস্য, দিল্লি থেকে চীন, ঢাকা থেকে আলেকজান্দ্রিয়া। 

আকাশ পানে তাকিয়ে নানা ভাবনা আসে। দিনের ব্যস্ততায় আর প্রথম রোদে আকাশপাণে তাকানোর ফুরসত ও ইচ্ছা কোনোটাই রাতের মতো হয় না। আকাশ দেখি, আকাশের বিশালতায় যেন হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। মাঝে মাঝে পাখি হয়ে ডানা ঝাপটাতেও। 

“এমন যদি হতো, আমি পাখির মতো, উড়ে উড়ে বেড়াই সারাক্ষণ”। তবে আজকে আমি প্রচন্ড মন খারাপ কিংবা প্রচন্ড মন ভালো নিয়েও আকাশ দেখছি না। আমি আকাশ দেখছি অপেক্ষা নিয়ে। অপেক্ষা নিয়ে আকাশ দেখলে ভাবনাগুলো ডালপালা মেলে। আকাশের বিশালতায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় এদিক সেদিক। আমি বাধা দেই না। 

রাত বাড়ে। বাড়ে আমার অপেক্ষা গুলো। মনে হয় আমাদের অনেকেরই। মাঝে মাঝে বিষন্নতা আসে। আমার পলকে মন স্বস্তি পায়। এভাবে চলতে থাকে।  চলতে থাকে আরেকটি ব্যস্ত দিনের প্রস্তুতিও। আমাকে যদি প্রস্ন করা হয় আমি প্রকৃতির কোন জিনিসটি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। নির্দ্ধিধায় উত্তর দিবো, আকাশ। মা ছোটবেলায় ছড়া শেখাতো, এখনো স্মৃতিতে প্রথর।

” Twinkle twinkle little stars, how I wonder what you are” 

“ছোট ছোট তারাগুলো মিটিমিটি জ্বলে, সোনামণি তাহাদের বিস্বয় গুণে” 

মাঝে মাঝে মনে হয় এক জীবন আকাশের কাছে বন্দি থাকলেই না হয় কত ভালো হত। এতো বিশালতার মাঝে সেই বন্দিত্ব কিছু উপভোগ্য হতো তখন? আচ্ছা, কোনো বন্দিত্ব ই কি কখনো উপভোগ্য হয়? জানা নেই। তবু পথে চলতে হয়। আকাশ থেকে ভাবনা সড়িয়ে সপে দিতে হয় জীবনের কাছে। বয়ে চলা জীবন, আমাদের ছুটা চলা জীবন। জীবন, যেখানে যেমন ঠিক তেমন।

২৪ জুলাই, ২০২৪

লিখাটি আরও পাবেন আমফুল ফেসবুক পেইজে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *