বাংলাদেশের রাজনীতিবীদদের কাছ একটি বড় সংখ্যার নাগরিকদের কোনো এক্সপেকটেশন নেই। বিগত বছর গুলোতে রাজনৈতিক দল, নেতা-কর্মীদের নানা কর্মকাণ্ড তাদের এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে।
আর ঠিক এই কারণেই ইশারা ইঙ্গিতে বাংলাদের জনগণের একটি বড় অংশ চাচ্ছে এই সরকার আর কিছুদিন থেকে যাক। অন্তত আরও বছর দুয়েক।
এখন ভাই আপনি ‘গণতন্ত্র’, ‘জনগণের সরকার’, ‘ম্যান্ডেট’ নিয়ে বিতর্ক জমাতে পারেন। তবে, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতিবাচক চরিত্র, জনগণের আস্থা পূরণে ব্যর্থ হওয়া, ১৭ বছরের জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদকে নিজস্ব ব্যানারের ডিল করতে না পারা, লুট, দূর্নীতি, মানুষের মন তাদের অবস্থান শুধু নিচের দিকেই নিয়ে গিয়েছে।
আর এর জলজ্যান্ত প্রমাণ হলো জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান। বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ ছাত্র সমাজের একটি অরাজনৈতিক ব্যানারে এসে নিজের বুকের তাজা রক্ত দিতে দ্বিধা করেনি। রাজনৈতিক ব্যানার হলে মানুষ ভাবতো, এসব একদল বুর্জোয়া এলিট রাজনীতিবীদদের তাদের নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার, সো ওই লেভেলের মাস পার্টিসিপেশন কখনোই থাকতো না।
তবে, জুলাই-আগষ্ট গণঅভ্যুত্থান আর ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পরে বাংলাদেশের মানুষ নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু করে। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্লোগান উঠে।
আক্ষেপের বিষয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চারিত্রিক পরিবর্তন, জুলাই-আগস্ট স্পিরিট তুলনায় চোখে পড়েনি। দলগুলোর মধ্যে আভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা, চাঁদাবাজি, লুটপাট, মানুষের কাছাকাছি যেতে না পারা, নিজের দলের কর্মীদেরই শুধু পলিটিকাল ‘জনগণ’ বলে ট্রিট করা আমাদের আরও হতাশই করেছে।
উল্টোদিকে ইউনুস সরকারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। অন্যতম কারণ? রমজানে দ্রব্যমূল্য ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে থাকা, প্রায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা, কূটনৈতিক সফলতা আর সব থেকে বড় কারণ এখনো কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুস্পষ্ট অভিযোগ না উঠা।
আর এখানেই কয়েকটি রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র বাধ সেধেছে। টকশোর টেবিল থেকে শুরু করে জনসভা, তাদের দ্রুত নির্বাচনের দাবীতে এমন জোড়ালো অবস্থান, জনগণের মধ্যে আরও সন্দেহের জায়গার উন্মেষ ঘটিয়েছে।
কেন?
এক, ইউনুস সরকারের সাম্প্রতিক সাফল্য। দুই, তাদের নিজেদের দলীয় বিশৃঙ্খলা। তিন, চাঁদাবাজি। চার, গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে আনাড়ি নানা ধরণের বক্তব্য।
আমার পোস্টের আলোচনার উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলকে বিতর্কিত করা না। অন্য যেকোনো সময়ের থেকে বিএনপির প্রতি আমার এক্সপেকটেশন বেশি।
ফ্যাসিবাদ পরবর্তী সময়ের আমাদের একটি বিএনপি লাগবে। তবে, রিফাইন বিএনপি লাগবে। জনগণের ভাষা বুঝবার মতো বিএনপি লাগবে। আমাদের এমন জামাত লাগবে। এমন এনসিপি লাগবে। এবি পার্টি লাগবে। অর্থাৎ আমাদের সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি লাগবে। রাজনৈতিক দল লাগবে।
আমরা বাইনারি পলিটিক্সে ত্যাক্ত-বিরক্ত। হ্যা, রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকবে। তবে, আমরা রিয়াক্টটিভ রাজনীতি দেখতে চাই। আমরা চাই রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হবে জনগণ।
আমাদের তৃণমূল রাজনীতিতে যোগ্য নেতৃত্ব থাকবে। কারণ, তৃণমূলের নেতারা আমার জনগণের সব থেকে কাছাকাছি থাকে। আর তৃণমূল থেকেই রাজনৈতিক পার্সেপশান তৈরী হয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে যোগ্য নেতা বের করে আনতে হবে।
এভাবেই রাজনীতি টিকে থাকবে। আর রাজনীতি টিকে থাকাটা আমাদের প্রয়োজন,খুব বেশি প্রয়োজন।