Skip to content

তারুণ্য ও রাজনীতি (পর্ব ০১)

চ্যালেন ২৪-এ জেন-জি’দের নিয়ে নিয়মিত একটি অনুষ্ঠান হয়। সেখানে মূলত বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের দেশ ভাবনা, সংস্কার, অধিকার, বৈষম্য নিয়ে নিজেদের মতামত শেয়ার করে থাকে। একজন তরুণ হিশেবে তারুণ্যের ভাবনা শুনতে, সেগুলো উপলব্ধি করতে, বিশ্লেষণ করতে বরাবরই মুখিয়ে থাকি। তাই এই সমস্ত অনুষ্ঠানে কিংবা তারুণ্যের মঞ্চ থেকে উঠে আসা সম্ভাবনার গল্প, আশার গল্প, ভালোবাসার গল্পের এক নিয়মিত শ্রোতা আমি।

এদেশের তরুণ সমাজের মধ্যে সাহস, দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছা, দেশকে কিছু দেওয়ার ইচ্ছা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। জুলাই-আগষ্টে ছাত্র-জনতার গণবিপ্লব তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তারুণ্যের সম্মিলিত শক্তির দাপটে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় ফ্যাসিস্ট হাসিনা। তরুণ সমাজ তাদের মেধা, স্পৃহা, ও লড়াই করার মানসিকতা কাজে লাগিয়ে একসময় মনে হওয়া এক অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে।

আমাদের শিক্ষিক তরুণ সমাজ রাজনীতি বিমুখ; এমন কথা আমরা হরহামেশাই শুনে থাকি। এখন প্রশ্ন আসতে পারে অধিকাংশ রাজনীতি বিমুখ এই তরুণ প্রজন্ম কীভাবে একটি সফল গণবিপ্লব সংগঠিত করছিলো! গণবিপ্লবের পেছনে যে আমাদের তরুণ সমাজের হঠাৎ করে রাজনৈতিক সচেতনতা মূল নিরাময় হিসেবে কাজ করেছিল তা নয়৷ বরং প্রথমে কোটা ব্যবস্থার নামে বৈষম্য, শেখ হাসিনা কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ নামে আখ্যায়িত করা ও সেই সময়টিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপরে চলা দমনপীড়নে, হত্যা ইত্যাদি এক গণবিপ্লবের প্রেক্ষাপট নির্মাণ করেছিল; যেখানে প্রতীকী হয়ে উঠেছিল আবু সাইদ, মুগ্ধ, ইয়ামিনরা।

আর গণবিপ্লবের কোনো রাজনৈতিক ব্যানার ছিল না বলেই সেটি সফল হয়। গত ১৫ বছরের রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব ব্যানারের আন্দোলনের ব্যর্থতা তার প্রমাণ। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি না যে তরুণদের মধ্যে (অন্তত একটি বিশাল সংখ্যার) মধ্যে তীব্র রাজনৈতিক সচেতনতা গণবিপ্লব সংগঠনে এক বিশাল ভূমিকা পালন করেছিল। তবে হ্যা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে থাকা নেতৃত্ববৃন্দ অর্থাৎ আমাদের সমন্বয়কেরা ছিলেন তীব্রভাবে রাজনৈতিক সচেতন। আর ঠিক এই কারণেই সাধারণ কোটা সংস্কার আন্দোলন ধীরে ধীরে সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবীতে পরিণত হয়।

তারমানে, কোনোভাবেই বলার উপায় নেই যে তরুণদের মধ্যে একমাত্র রাজনৈতিক সচেতনতাই সফল গণবিপ্লবে সংগঠনে ভূমিকা পালন করে। তরুণদের মধ্যে যথেষ্ট রাজনৈতিক সচেতনতার দিক থেকে প্রশ্ন তুলায় যায়। আবার এখন কথা হতে পারে রাজনৈতিক সচেতনতা তীব্রভাবে তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে না গেলেও যদি এত বড় অভ্যুত্থান সংগঠিত হয় তাহলে রাজনৈতিক সচেতনতা এই সময়টিতে এসে এতো গুরুত্বপূর্ণ কেন হয়ে উঠবে। তরুণেরা সংকটের মুহুর্তে তার অবস্থান জানান দিলে সেটিই কি যথেষ্ট নয়?

উত্তর হচ্ছে ‘না’। গণবিপ্লবের আগের, চলাকালীন ও শেষের দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতি কি এক? নিশ্চয় না। জুলাই-আগষ্টে ছাত্র-জনতা যেভাবে দল, মত, ধর্ম নির্বিশেষে এক হতে পেরেছিল সামনেও কি তা একইভাবে সম্ভব?

চলবে…..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *