বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতির যে কাঠামো আমার সব থেকে ভালো লাগে তা হলো যে কেউ চাইলেও হুটহাট জামাত বা শিবিরের কর্মী হতে পারে না- নেতা হওয়া তো দূরের কথা। আর ঠিক এই কারণেই বাংলাদেশে দৃশ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর থেকে জামাত ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের আভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা চোখে পড়ার মতো। এখানে হুটহাট কেউ চাইলে দলের ব্যানারে এসে তার ব্যক্তিগতস্বার্থ হাসিল করতে পারে না। তাকে সংগঠনের স্বার্থে পরিক্ষিত কর্মী হয়ে উঠতে হয়।
আর এটি হয় মূলত আদর্শভিত্তিক রাজনীতি চর্চার মাধ্যমে। আপনি যখন একটি শক্তিশালী আদর্শিক জায়গা থেকে রাজনীতি করবেন, আপনি স্বাভাবিকভাবেই সেই আদর্শ আপনার রাজনৈতিক এক্টিভিটিতে আনার চেষ্টা করবেন বা তা এসে যাবে।
আপনি বাংলাদেশের অন্য দলগুলোর দিকে তাকান, এদের বেশিরভাগ নেতা-কর্মী বৃহৎ স্বার্থ উপেক্ষা করে, ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য রাজনীতি করে। দলগুলোর ভেতরে আভ্যন্তরীণ দলাদলি যার অন্যতম একটি প্রমাণ। আমি যদি আদর্শিক রাজনীতির বিশ্বাস করি তাহলে সেই রাজনীতিতে অভ্যন্তরীণ দলাদলির কোন প্রশ্নই থাকবে কেন?
তৃণমূল পর্যায়ে আমার যতটুকু রাজনীতি দেখা ও বুঝার সুযোগ হয়েছে তাতে এখানে যে কতটুকু অপরাজনীতি হয় তা বলাই বাহুল্য। হুটহাট রাজনীতিতে ঢুকে পড়া, সমাজের অগ্রহণযোগ্য লোকদের তথাকথিত ‘নেতা’ হয়ে উঠা, ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য দলাদলি করা, সমাজে কোনো ধরণের কন্ট্রিবিউশান না থাকলেও তথাকথিত বড় ‘নেতার’ অধীনে কেউ একজন হওয়ার চিন্তা আদতে রাজনীতির ‘ব্যাড কোয়ালিটির’ পরিচয় বহন করে।
রাজনীতিতে পার্সেপশান ম্যাটার্স করে। আর ঠিক এই কারণে আমার মনে হয় ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ কথাটি মার্কেটে টিকবে। এখানে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বলতে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে আভ্যন্তরীণ সংস্কার ও জাতীয় রাজনীতি সিস্টেমেটিক পরিবর্তনের আওয়াজ উঠবে। আর ঠিক এই কারণে মনে হয় ছাত্রদের নতুন দল জনগণের কাছে বেশ ভালোভাবেই পৌছুতে পারবে। তবে রাজনৈতিক দলের আভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও স্মুথ চেইন অব কমান্ড বজায় রাখার শর্তে। মোটকথা যে আওয়ামী ধারার রাজনীতি থেকে বিএনপি বেড়িয়ে আসতে পারছে না (অন্তত বিগত ৬ মাসে), সেই আওয়ামী ধারার রাজনীতিতে স্ট্রলংলি ডিনাই করতে হবে।
অন্য যেকোনো সময়ের থেকে স্বাধীনতা পরবর্তীতে বাংলাদেশের আমজনতা ও বিশেষ করে তরুণ সমাজ রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে উঠেছে। ফ্যাসিজমের ভয়াবহ সামাজিকরণের পরে তরুণ সমাজের রাজনীতি বিমুখতা থেকে জুলাই-আগষ্ট গণঅভ্যুত্থান আমাদের সাময়িক মুক্তি দিয়েছে। আর এক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বিগত সময়ের রাজনৈতিক কর্মকান্ড (শুধু বাইরের নয়, আভ্যন্তরীণও) সম্পর্কে সম্মুখ সচেতন না থাকলে, পাশাপাশি জনগণকে তার বহিঃপ্রকাশ সম্পর্কে অবহিত করতে না পারলে জনমানস থেকে আস্থা হারাবে। জনগণ আওয়ামী ধারার রাজনীতি আর এ দেশে দেখতে চায় না।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার সংস্কার কাঠামো গড়ে না উঠলে, গণঅভ্যুত্থান আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সুফল দিতে পারবে না।