বাংলাদেশে রাজনীতি করে এমন অধিকাংশ তথাকথিত রাজনীতিবীদের কোনো রাজনৈতিক দর্শন নেই। নেই সুনির্দিষ্ট কোনো আদর্শ। রাজনীতির সংজ্ঞায় এদের কার্যক্রমকে কোনোভাবেই সংজ্ঞায়িত করা যাবে না।
তাহলে রাজনীতি বলতে আসলে কী বুঝায়? আমরা কীভাবে রাজনীতিকে সংজ্ঞায়িত করবো? রাজনীতির মানদণ্ড কী?
রাজনীতির সাথে আদর্শের জায়গাটি খুব নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। আদর্শ না থাকলে সেখানে রাজনীতি থাকবে না। এখন ব্যক্তি কিংবা দলবিশেষে আদর্শের জায়গাটি ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
মূলত প্রকৃত রাজনীতি যারা করেন তারা কোনো না কোনো আদর্শে বিশ্বাসী। তাদের আদর্শের প্রতিষ্ঠা, প্রচার ও প্রসারের মূল কেন্দ্রে থাকে জনতা। তারা মনে করেন সমাজে তাদের আদর্শের বাস্তবায়ন মানবমুক্তির অন্যতম পাথেয়। তারা তাদের আদর্শ নিয়ে জনমানসের দরজার কড়া নাড়ে।
রাজনীতিতে ব্যক্তিস্বার্থের কোনো জায়গা নেই। কেউ রাজনীতি করে মানে হচ্ছে সে জনগণের জন্য নিবেদিত প্রাণ। জনকল্যাণ ছাড়া তার কোন উদ্দেশ্যে নেই। বলা যায়, জনগণের সেবার ধারণা থেকেই জনমুখী রাজনৈতিক ধারণার সূত্রপাত।
এখন কেন বললাম যে আমাদের দেশের অধিকাংশ রাজনীতিবীদের আদর্শের জায়গাটি শক্ত না। এখানে রাজনীতির নামে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের প্রতিযোগিতা চলে। জনগণকে উপেক্ষা করে তথাকথিত রাজনৈতিক নেতাদের পকেট ভারী হয়। নেতাদের আয়ের উৎস চাঁদাবাজি, দখলদারি।
ভয়াবহ রাজনীতি বিমুখ ও রাজনীতি অসচেতন এই জাতি স্বাধীনতার এতো গুলো বছর পেড়িয়ে গেলেও রাজনীতির নামে শিকার হয়ে শোষণ বঞ্চনার। আদর্শহীন তথাকথিত রাজনৈতিক নেতারা নির্বাচনের আগে গলা ফাটিয়ে, ভোটারদের প্ররোচনা করে, আবেগ কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় মসনদ পাকাপোক্ত করে। ক্ষমতায় গিয়ে আবার জনগণের অর্থই লুটপাট করে। জনগণমুখী রাজনীতি হয়ে উঠে জনগণকে হাতিয়ার বানিয়ে ভোগের পায়তারা।
রাজনৈতিক দলগুলো থেকে কথায় কথায় ‘জনগণ, জনগণ’ বুলি আওড়াতে শোনা যায়। আদতে ‘জনগণ’ বলতে তাদের অনুসারী ও চাটারদলকেই বুঝে থাকে। এখানে ‘জনগণ’ একটি শব্দ মাত্র। ‘জনগণের দল’, জনগণের মত’ – আদতে শব্দ গুলো কখনও ইনক্লুসিভ না। বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণ রাজনীতিবিমুখ ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি ত্যক্তবিরক্ত।
রাজনীতিতে আদর্শের প্রতিফলন নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। দলের আয়ের উৎসের কোনো স্বচ্ছতা নেই। নেই জনবান্ধন কোনো কর্মসূচি।
সব থেকে দুঃখের বিষয় হচ্ছে ৭১ পরবর্তী সব থেকে বড় গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হওয়ার পরেও, ফ্যাসিবাদী শক্তিকে আপাতত বিতারিত করা গেলেও বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আশানুরূপ পরিবর্তন আসেনি। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ধারণাটিও যেন দিন দিন মিইয়ে যাচ্ছে।
তবু আশা থাকবে। বাংলাদেশে জনকল্যাণমুখী রাজনৈতিক চর্চা থাকবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমোঝতা থাকবে, সংঘাত থাকবে না। নেতারা যোগ্যতার প্রতিযোগিতা করবে। ভালো ও জনকল্যাণমুখী কাজের পসরা সাজিয়ে বসবে, ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ কাঠামো গড়ে তুলায় কাজ করবে, অভ্যুথানের চেতনা ধারণ করে ছাত্র-জনতার ভাষা বুঝতে পারবে, রাজনীতি করতে গিয়ে ব্যক্তিস্বার্থের জলাঞ্জলি দিবে।
স্বপ্নের বাংলাদেশ থেকে হয়তো আমরা খুব বেশি দূরে নই। ইন্টেরিম সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে একটি সুন্দর বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপনের। শীঘ্রই নির্বাচনের মাধ্যেম ক্ষমতার হস্তান্তর হবে। তবে, সে পর্যন্ত আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করে যেতে হবে।