রাজনীতি করতে হলে সব থেকে বেশি যা প্রয়োজন সেটি হচ্ছে কেন কেউ রাজনীতি করবে সেটি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা। আর রাজনীতি আসলে কি, এটি না বুঝলে কেউ কেন সে রাজনীতি করবে তার উত্তরও পাবে না।
আদতে স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দেশে যা হয়ে এসেছে সেসবকে সুষ্ঠু রাজনীতি বলা যাবে না। রাজনৈতিকভাবে দলগুলো নির্বাচনের আগে নানা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গলা ফাটালেও বাস্তবে কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন বয়ে আনতে পারেনি।
একটি দীর্ঘ সময় নানা শাসক গোষ্ঠীর কাছ থেকে শোষিত হওয়া জাতি যেমন অল্পতেই অধৈর্য হয়ে পরে, আবার বেশ অল্পতেই সন্তুষ্ট হয়ে যায়। জনগনের এই মনস্তত্ত্বকে পুঁজি করেই ৭১ পরবর্তী আমাদের শাসকেরা তাদের তথাকথিত রাজনৈতিক গেম খেলে গিয়েছেন। আর ঠিক এই কারণেই ৭১’এর পরবর্তী আমাদের ২৪ ঘটাতে হলো, তাও আবার সেটি কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানারে না, সাধারণ ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে।
রাজনীতি হবে জনগণের সেবা। জনগণের আওয়াজ তুলে ধরা। ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তুলা। এখন আমরা যদি এই তিন ক্রাইটেরিয়াকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে নিয়ে তথাকথিত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে মাপি, তাহলে হতাশই হতে হবে।
বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, যারা সকাল-সন্ধা গনতন্ত্রের গান গায়, তাদের মধ্যেই গনতন্ত্র নেই, দল গুলোর ভেতরে যৌক্তিক সংস্কারের তারণা নেই। বিগত সাল গুলোতে ক্ষমতায় আসা রাজনৈতিক দল ছিলো পরিবার কাঠামোই সীমাবদ্ধ তীব্র অগণতান্ত্রিক শক্তি।
রাজনৈতিক দল গুলোর কেন্দ্রীয় কিছু নেতৃত্বের যাও কিছু স্ট্যান্ডার্ড ছিলো, আরেকটু নিচে কিংবা তৃণমূল পর্যায়ে নেতৃত্বের মান যাচ্ছেতাই। রাজনীতির নামে মূলত এখানে চলে ব্যক্তিপূজা, দখলদারী, প্রভাব-বিস্তার ও গলাবাজী। নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দল, যারা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসতে তীব্রভাবে আত্মবিশ্বাসী, ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই তাদের নানা কর্মকাণ্ড জনমনে প্রশ্ন তুলে।
বাংলাদেশের বিগত সাল গুলোর রাজনীতি ও রাজনৈতিক কালচার নিয়ে বলতে গেলে অল্প কথায় শেষ করা যাবে না। জনগণের মধ্যে তীব্র অধিকার ও রাজনৈতিক অসচেতনতা কে পুঁজি করেই মূলত ফ্যাসিস্ট আওয়ামিলীগ ১৬ বছর অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে ছিলো।
নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চালু করতে না পারলে আমাদের মুক্তি নেই। আর এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে শিক্ষিত, রাজনৈতিক সচেতন তরুণ সমাজকে। রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও সংস্কারের ধারণা নিয়ে জনগণের কাছে পৌছানোর সময় এসেছে। ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামো বিনির্মাণ, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রচলন করতে হলে প্রচুর পড়াশোনার প্রয়োজন।
তীব্র রাজনৈতিক ও রাষ্ট্র বিষয়ক জ্ঞান না থাকলে জনগণের কাছে পৌছানো যাবে না। আর জনগণের মুক্তিও মিলবে না। জ্ঞান, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, জনগণের চাওয়া বুঝা ও ক্যারিসমেটিক নেতৃত্বের মাধ্যমেই জুলাই বিপ্লব আর অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছে যাবে।
ইনকিলাব জিন্দাবাদ।