Skip to content

বাংলাদেশের রাজনীতি চর্চার মধ্যে চাটুকারিতার দিকটি অন্তত বিদঘুটে। মানে আমি দাবী করছি আমি একটি আদর্শকে ধারণ করি; এই আদর্শ প্রচারে আমার চাটুকার হতে হবে কেন? বা ব্যক্তিপূজাকে স্থান দিতে হবে কেন? আমরা যারা একই আদর্শ ধারণ করি তারা এক পতাকাতলে না থেকে ভিন্ন ভিন্ন পতাকাতলে থাকতে হবে কেন?

আচ্ছা, ধরুন আমি একজনকে ব্যক্তিকে খুব ভালোবাসি। তার ব্যক্তিত্ব, ক্যারিসমেটিক নেতৃত্ব আমাকে সম্মোহিত করে। এই ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম, তাকে সমর্থন প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম কেন ব্যক্তিপূজা হবে? তাকে যে কারণে ভালোবাসি বা পছন্দ করি, সেই নীতিগত আদর্শ নিজের মধ্যে ধারণ করাই কি তার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশের উত্তম মাধ্যম না?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যক্তিপূজা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে পোস্টার, ব্যনার, ফেস্টুন। পোস্টারে কাকে কতটুকু ব্যক্তিপূজা করা হবে সে হিসেবে সেই ব্যক্তিদের ছবির সাইজ ও পজিশন নির্ধারিত হয়। আর বর্তমানে ব্যক্তিপূজা বা চাটুকারিতার অন্যতম একটি কম-খরুচে মাধ্যম হয়ে উঠেছে ফেসবুক। যে যত বিশেষণ মিশিয়ে তাদের নেতাদের নিয়ে পোস্ট করতে পারে, দলীয় অবস্থান তার তত বেশি শক্ত হয়।

রাজনীতিতে ব্যক্তিপূজা বা চাটুকারিতার প্রবণতা যত বেশি হয়, নিজেদের মধ্যে দলাদলি তত বাড়ে। অনেক সময় দেখা যায়, একই এলাকায় একই দলের ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ থাকতে। নেতাদের অনুসারীরা ভিন্ন ভিন্নভাবে ব্যক্তিপূজা ও চাটুকারিতায় লিপ্ত হয়ে রাজনীতিতে তাদের অবস্থান শক্ত করতে চায়। আর এতে সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল হয়।

আচ্ছা, মানুষ ব্যক্তিপূজা কেন করে বা চাটুকার হয়ে উঠে? বলতে পারেন? মানুষ কি তখনই ব্যক্তিপূজা বা চাটুকারিতায় লিপ্ত হয় না যখন তার মধ্যে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের ইচ্ছা থাকে? হ্যা, আমার তাই মনে হয়। মানুষ মনে করে তীব্র চাটুকার হয়ে উঠা তার ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের পথ সহজ করে দিবে। আমরা কি দেখেনি রাজনীতির নামে হাজার কোটি টাকা অবৈধ উপার্জনের অগণিত উদাহরণ?

৭১’এর স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এই ব্যক্তিস্বার্থ একটি বড় জায়গা দখল করে নেয়। দলগুলো আস্তে আস্তে তাদের আদর্শিক জায়গা থেকে সরে এসে স্বার্থান্বেষী হয়ে উঠে। রাজনীতির নামে লুটপাট, চাঁদাবাজি, দখলদারি, টেন্ডারবাজি যার জ্বলন্ত প্রমাণ।

আচ্ছা এখন বলেন তো, রাজনীতির নাম করে নিজ ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের চেষ্টা কি আমার জনগণের সাথে প্রতারণা করা না? ধরেন আপনি মনে করেন ‘ক’ নেতার রাজনীতি করলে আপনার পকেট ‘ভালো’ থাকবে। শুধু আপনিই না, আপনার মতো আরও অনেকেই হয়ত এমন মনে করে। এখন বলেন তো, আপনার নেতা একা একজন তার এতো নেতাকর্মীদের পকেট কীভাবে ভালো রাখবেন? চাকরি করে নাকি ব্যবসা করে? নাকি তার অনুসারীদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আপনাকে অন্য পন্থা দেখিয়ে দিবে? পয়সা কামানোর সু্যোগ নানা অবৈধ উপায়ে করে দিবেন? হ্যা, তাই তো দেখি আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে।

আচ্ছা ভাই, আপনি বৈধ-অবৈধ বুঝেন? যদি আপনি ব্যক্তিস্বার্থের রাজনীতি করে থাকেন, তাহলে আপনার রাজনীতি থেকে কাঙ্ক্ষিত উপার্জন (অবৈধ উপার্জন) আসবে আমার খেটে খাওয়া মানুষের পকেট থেকে। সড়কে চাঁদাবাজি বাড়বে, পরিবহন মালিকেরা ভাড়া বাড়াবে। বাজারে সিন্ডিকেট হবে, আমার জনগণ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনায় হিমসিম খাবে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি হবে, আমার শ্রমিক-কর্মচারী ভাইয়েরা তাদের মাইনে ঠিকমতো পাবে না।

ভাই, আপনার রাজনীতির নামে এই স্বার্থান্বেষী হয়ে উঠা পুরো জাতির সাথে প্রতারণা করা হবে। আমার জনগণের থেকে অবৈধ উপায়ে অর্থ কামিয়ে আপনি আপনার নেতার আরও গুণগান গাইতে থাকবেন, এতে আমার জনগণের লাভ কি বলেন? আমার খেটে খাওয়া জনগণ, যারা রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝে না।

আপনি আপনার নেতার আয়ের উৎস জানেন? তিনি কীভাবে আয় করেন? জানেন না? জানেন? কি মনে হয় এখন ভাই?

আর আপনি যদি আমার জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করেন, কোনো পদের লোভে না, ভোগের লোভে না, আপনাকে আমি সম্মান জানাই। আপনি নিজ স্বার্থ জলাঞ্জলি নিয়ে আমার মানুষের জন্য, তাদের অধিকার আদায়ের জন্য, সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য যতটুকু যা-ই করছেন, আপনার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, আপনাকে স্যালুট জানাই।

আমাদের দেশে রাজনীতির সুষ্ঠু চর্চা শুরু হোক। রাজনীতি হোক আমার জনগণের জন্য ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যম, তাদের মুক্তির মাধ্যম, তাদের হয়ে লড়াই করার মাধ্যম। একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে আমরা হয়তো খুব কাছেই। শুধু আমাদের ব্যক্তিস্বার্থ উপেক্ষা করে জনগনের জন্য আওয়াজ তুলতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *